বাবার চিঠি : উদ্ভিদ, আমি ও বাবা ~ সৈয়দা মুৎমাঈন্না মাহী

আমি তখন খুব ছোটো, মাত্র দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ি। বানান করে পড়তে পারি, একটানা নয়। বাবার লেখা চিঠি এসেছে কলকাতা থেকে। মেয়েকে ভালোবেসে লিখেছেন তিনি, ‘বাবা, গাছকে ভালোবাসো’। বাবা ঘনঘন লেখেন, তার মেয়ে পড়তে শিখেছে, গাছ চিনতে শুরু করেছে। সেই বছরই বাবা আমাকে দিয়ে বাড়ির সব গাছের একটা লিস্ট করিয়ে নিলেন। মনে আছে, সারা বাড়িতে তখন সুপারি গাছ ছিল ৫২টা।

শুরুটা বোধ হয় এভাবেই হয়। ধন্যবাদ বাবা। আমার ভেতরে নীরবে নিভৃতে গাছের প্রতি ভালোবাসার বীজ বপন করে জীবনের কত বড় ‘নীরব’ বন্ধুকে যে তুমি আপন করে দিলে! আমি আস্তে আস্তে আরো গভীরে এসব বুঝতে পারছি।

বাড়ি মানেই গাছগাছালিতে ভরা বাড়ি– এই দৃশ্যকল্পে আমি এতই অভ্যস্ত হয়ে উঠি যে, গাছবিহীন নগরে পড়তে গিয়ে ভীষণ দিশেহারা হয়ে পড়ি প্রথমে। যে কটা গাছ বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে চোখে পড়ত আমি যেন দুচোখ দিয়ে তাদের গিলতাম। ওদের চৈত্র-দুপুরের চেহারা, বৃষ্টি-সকালের ঝলমলে রূপ আর শীতকালের পাতা ঝরা যেন আমি চোখ বন্ধ করেই দেখতে পেতাম। আমার চোখের পানির নীরব সাক্ষী আমার দেখা চেনা-পরিচিত সেই গাছগুলো।

লন্ডন শহরে ছিলাম বছর পাঁচেক। চলে আসার আগে পরিচিত প্রতিটি এলাকায় যত গাছ ছিল প্রত্যেককে আমি বলেকয়েই এসেছি। বিষয়টা অনেকের কাছে পাগলামি মনে হতে পারে, কিন্তু আমার কেবলই মনে হতো, গাছগুলো আমাকে দেখে, আমাকে অন্তর দিয়ে অনুভব করে। আমি জানি, আবার কখনো যদি যাই, ওরা নিশ্চয়ই আমাকে দেখে চিনবে, কেবল ওদের আনন্দাশ্রু আমি দেখতে পাব না।

শ্বশুরবাড়ীর গ্রামের গাছগুলির গল্প আগেই শুনেছিলাম। বিয়ের পর তাদের সাথে আমি স্পেশালি দেখা করেছি, শ্বশুরবাড়ীর গাছ বলে কথা! সন্তুষ্ট রাখতে হবে তো! আমার নিজের বাসায় খুব বেশি গাছ নেই। ইচ্ছা করেই করি না। ভয় লাগে, যদি অযত্ন হয়! একটা সন্তানও যদি কম আদর পায়– সেই ভয়ে বৃক্ষনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আর কী!

প্রতিটি শিশু তার বাবা-মা’র শখকে ধারণ করে, অচেতনভাবেই। আমি কৃতজ্ঞ, আমি আমার বাবার বৃক্ষপ্রেমকে ধারণ করতে পেরেছি, বেঁচে গেছি। এই নীরব বন্ধুর কাঁধে মাথা রেখে কাঁদলে উপদেশ বর্ষণ করে না, সান্ত্বনাও দেয় না, তবু মন হালকা হয়।

“যে সমাধি বেদীটার ঠিক ওপরে/ ফুলন্ত গাছটা পড়েছে নুয়ে/ ওখানে যে রয়েছে শুয়ে/ তার ভাগ্যকে আমি ঈর্ষা করি। ”

এমন ঈর্ষণীয় ভাগ্য আমার হবে কী না জানি না! তবে পুত্রকে বলে যাব- আমার নীরব জীবনের নীরব সাথীদের যত্ন নেয় যেন। হে পুত্র, তোমার জন্য আমি প্রার্থনা করি– মায়াবতী বৃক্ষের মায়ায় তুমিও জড়াও, তুমিও অনুভব করো আমারই মতো!

লেখক/লেখিকা ~ মু সৈয়দা মুৎমাঈন্না মাহী

লেখাটা ভালো লাগলে শেয়ার করতে চাইলে একদম ওপরে শেয়ার বাটন আছে। 

 

গাছ নিয়ে মূল্যবান টিপস সরাসরি আপনার হোয়াটস্যাপ একাউন্টে পেতে আমাদের "গাছের পাঠশালায়" ভর্তি হতে পারেন। এই পাঠশালায় রোজ গাছ নিয়ে ছোটো ছোটো টিপস শেয়ার করা হয়। খুব সহজে ,কম যত্নে আর কম খরচে গাছ করা সম্ভব ! ভালো গাছ করাটা কোনো রকেট সাইন্স না , কিন্তু সঠিক যত্নটা জানা দরকার আর চর্চায় থাকাটা দরকার।

আমাদের হোয়াটস্যাপ গ্রুপ।

আমাদের হোয়াটস্যাপ গ্রুপ “গাছপাকার গাছের পাঠশালা” ।রোজ একটু একটু করে গাছ করা শিখতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।

আমাদের ফেসবুক পেজ।

আমাদের ফেসবুক পেজ “গাছপাকা” । গাছ নিয়ে বিস্তারিত জানতে এই পেজটি ফলো করতে পারেন।

আমাদের ফেসবুক গ্রুপ।

আমাদের ফেসবুক গ্রুপ “গাছের সমস্যার সমাধান ” । আপনার গাছের সমস্যায় পরামর্শ চাইতে এই গ্রুপে পোস্ট করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
× Whatsapp