Share this post:
আশা রাখি আমার লেখাটি আপনাকে আরো একটু গাছ-প্ৰেমী হতে সাহায্য করবে।
আমি একজন থ্রী-ডি মডেলিং আর্টিস্ট। কর্ম ও বিবাহ সূত্রে, উঃ ২৪ পরগনা থেকে পাড়ি দেওয়া সুদূর ব্যাঙ্গালোরে। পেশাটা ছাড়তে হলো ছেলের কথা ভেবে। একজন আইটিতে কর্মরত পঁচিশ বছরের মেয়ের সাধের পেশা ছেড়ে গৃহকোণে মন দেওয়া এবং পুরো মনটা দিয়ে উঠতে না পারার মধ্যে একটা টানাপোড়েন থেকেই যায়। বলতে বাধা নেই, একা আর সম্পূর্ণ নিরুপায় আমি, ছোটো বাচ্চা নিয়ে। বরের সাহচর্য, সহমর্মিতা ছিলো। ওর সাথে নার্সারী গিয়ে গাছের প্রতি ভালোবাসাটাও গড়ে ওঠে আস্তে আস্তে,সেই শুরু। পেশা ছেড়ে বাসা সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম।
অ্যালোভেরা দিয়ে শুরু, এরপর প্রতি মাসে আমার একটা বাঁধা ধরা বাজেট থাকে গাছ কেনার জন্য। এটা অভ্যাস হয়ে দাঁড়ায়। আমার ১২০০ স্কোয়ার ফিটের ফ্ল্যাট, আর সাথে প্রাণ খোলা ব্যালকনি। আশপাশ পুরোটাই সবুজ। পেশা চলে যেতে, গাছ নিয়ে পড়লাম ঘরসজ্জায়। সমস্তটা বোহো হোম ডেকর, পরিকল্পনাটাও আমার, শুধু বাস্তবায়িত আর পাশে থাকার ক্রেডিট বরের। আমার আড়াই বছরের ছেলেকেও পই পই করে বলা আছে, এই গাছগুলো তোমারই মতন আদরের… ওরা যে আমার প্রথম সন্তান! স্পুন ফিডিং করানোর মতো ওদেরকে খাওয়াই, জল দিই, যত্নআত্তি সব করতে হয়। আমি ক্যাকটাস পাগল। টেরারিয়াম পাগল। ওদের সাজসজ্জায় আমার শিল্পীসত্তার ছোঁয়া তো থাকবেই।
ওদের সম্বল করেই আমার ছোটো ছোটো আনন্দপ্রাপ্তি। এবার একটু বলি, এই গাছগুলোর সাথে আমার অন্তরঙ্গতার গল্প।
৬ই আগস্ট, ২০২০ আমার কাকা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে চলে গেলেন। না,সেটা ঠিক যাওয়ার বয়স নয়। কাকিমা ভাইজ্যাগ থেকে গভীর রাতে একা অ্যাম্বুলেন্সে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে বসিরহাট আনেন মৃত স্বামীকে। আর আমি তখন একাই কাঁদছি এই ব্যাঙ্গালোরের বারান্দায় , মাগরিবের সময় ওনাকে যখন কবর দেওয়া হচ্ছে ওই সুদূর বসিরহাটে, আমি এইখানে একটা বাগানবিলাস লাগালাম, চোখে জল নিয়ে। আজও সেটি গোলাপি হয়ে আছে।
দুঃখটা কাটিয়ে উঠতে শুধুমাত্র একমাস সময় পেলাম। ৮ই সেপ্টেম্বর,২০২০ বাড়ি থেকে ফোন এলো, বাবা ভালো নেই। একজন সুস্থ ৫৩ বছরের মানুষও আমার চাচার অনুগামী হলেন ! কলকাতা মেডিক্যালে ১৪দিন ভেন্টিলেশনে লড়াই করে চলে গেলেন বাবা, আমার সাথে দীর্ঘ এক বছরের বিনা সাক্ষাতে। খুব আদরের বড়ো মেয়ে ছিলাম “আমার আব্বার”। আমি তবুও পড়ে রইলাম এই ব্যাঙ্গালোরে, কাঁদি শুধু একা এই ব্যালকনিতে, আরও গাছ লাগাতে থাকি কষ্ট ভুলতে। এ কষ্টের কোনো ভাষা নেই,আর কোনো ব্যাখ্যাও নেই। তাই সবুজকে আঁকড়ে ধরি আমি সব হারাতে হারাতে। শুরু হলো নতুন সংগ্রাম। বাবার ব্যবসার লোন মেটানোর দায়িত্ব এল আমাদের দুই মেয়ের উপর।
পরের সাতমাস ধরে শুরু করলাম পেশা, এইবার ম্যাক্রম আর্টিস্ট হয়ে। বোহো আর্ট আমার সাবজেক্ট। নিজের ফ্ল্যাটের বোহো ইন্টেরিয়রের সাথে সবুজ গাছ। এই হল আমার থিম। ভালোবাসাকে পেশা বানিয়েছি।
সবুজ আমার কষ্ট ভোলায়। ভুলতে সাহায্য করে বাবার অনুপস্থিতি। যাদেরকে সন্তান বলতাম, আজ ওরাই আমায় নিঃস্ব হওয়ার থেকে বাঁচিয়েছে। ওরাই ভবিষ্যতের মহীরুহ। বাবা ভেন্টিলেশনে তিলতিল করে যে শ্বাসকষ্ট পেয়েছে, সেটা আমি গাছ লাগিয়ে ভুলতে চাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি আপ্রাণ।
ভালো থাকুন সবাই, আর গাছ লাগান। ওরা বড়ো ভালোবাসার কাঙাল, বাবা হারা সন্তানের মতন।
লেখক/লেখিকা ~ শবনম মল্লিক
লেখাটা ভালো লাগলে শেয়ার করতে চাইলে একদম ওপরে শেয়ার বাটন আছে।
গাছ নিয়ে মূল্যবান টিপস সরাসরি আপনার হোয়াটস্যাপ একাউন্টে পেতে আমাদের "গাছের পাঠশালায়" ভর্তি হতে পারেন। এই পাঠশালায় রোজ গাছ নিয়ে ছোটো ছোটো টিপস শেয়ার করা হয়। খুব সহজে ,কম যত্নে আর কম খরচে গাছ করা সম্ভব ! ভালো গাছ করাটা কোনো রকেট সাইন্স না , কিন্তু সঠিক যত্নটা জানা দরকার আর চর্চায় থাকাটা দরকার।

আমাদের হোয়াটস্যাপ গ্রুপ।
আমাদের হোয়াটস্যাপ গ্রুপ “গাছপাকার গাছের পাঠশালা” ।রোজ একটু একটু করে গাছ করা শিখতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।

আমাদের ফেসবুক পেজ।
আমাদের ফেসবুক পেজ “গাছপাকা” । গাছ নিয়ে বিস্তারিত জানতে এই পেজটি ফলো করতে পারেন।

আমাদের ফেসবুক গ্রুপ।
আমাদের ফেসবুক গ্রুপ “গাছের সমস্যার সমাধান ” । আপনার গাছের সমস্যায় পরামর্শ চাইতে এই গ্রুপে পোস্ট করুন।