বাবাই এর গল্প – ১

একদিন খুব ভোরে হঠাৎ বাবাই এর ঘুমটা ভেঙে গেলো … পাশে ছোটো বাচ্চাটা অঘোরে ঘুমিয়ে আছে , তার পাশে বাচ্চার মাও ঘুমিয়ে আছে। দুজনের মুখেই কি নিষ্পাপ শান্তি ।
ঘুমন্ত মানুষের মুখ দেখলে মানুষ চেনা যায়। ঘুম থেকে উঠেই অনেক মানুষ মুখোশ পড়ে নেয়, তখন মানুষ চিনতে দম লাগে ।

ঘুমটা ভাঙলো জানলার পাশের বড়ো আম গাছটায় একটা ছোট্ট পাখির “টুইই… টুইই….” ডাক শুনে।

পাখিটা প্রায়ই আসে ।রোজ রাতে শোবার আগে বাবাই জানলার ওপাশটায় কিছু দানা রেখে দেয় , সেইগুলোই খেতে আসে। তবে কোনোদিন এতো সকালে আসে না। আজ কি মনে করে এসেছে কে জানে?

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো ভোর পাঁচটা।

বাবাই সফটওয়ার ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করে । পশ্চিমবঙ্গে আর চাকরি কই …তাও এই টাটা, ইনফোসিস, উইপ্রো ছেলেগুলোকে চাকরি দিচ্ছে বলে রাজ্যটা এখনো টিকে আছে।
বাবাই এর কাজটা পছন্দ না । শুধু সফটওয়ার বলে না , আসলে বাবাই এর কোনো কাজই পছন্দ না। বউ বাজার করে আনতে বললে বাবাই এর মুখে একরাশ বিরক্তি এসে যায়। বাজারে যাওয়া মানেই এক গাদা লোক , ভিড় ভট্টা.. একদম পছন্দ নয় ।

অথচ এই ছেলেকেই গাছের যত্ন করতে বলুন , সারাদিন কাটিয়ে দেবে , তখন কোনো ক্লান্তি নেই।

আড়মোড়া ভেঙে মশারিটা তুলে বাইরে যাবে বলে যে পা বাড়িয়েছে অমনি পল্লবী বলে উঠলো ” কিগো , কোথায় যাচ্ছ? ”

এই হচ্ছে সমস্যা। পাঁচটার সময় ঘুমাচ্ছিস ঘুমা না । দিনে চব্বিশ ঘণ্টা সিসিটিভির মতো একটা কান ছেলের দিকে আর একটা কান বরের দিকে রেখে দিয়েছে। এমনকি স্নান করতে গেলেও কান বাথরুমের বাইরে থাকে।

“কোথায় আবার যাবো , সুসু করতে যাচ্ছি ” বলে বাবাই গেটটা খুলে উঠানে চলে এলো।

বাড়িটা অনেকটা বড়ো , প্রায় দশ কাঠা জমির ওপরে অর্ধেকটা বাড়ি , আর বাকি অর্ধেকটা বাগান। বাড়িটা তৈরি করেছিলো বাবাই এর দাদু , ইন্ডিয়ান আর্ম ফোর্স এর ডাক্তার ছিলেন উনি ।

বাগানে অনেক গাছ। আম লিচু কাঁঠাল, বেশ কিছু নারকেল গাছ । এই বাগানেরই একটা জায়গায় “বাগানের ভিতরে আর একটা বাগান” । এটা বাবাই স্পেশাল বাগান।

এখানে দুটো বড়ো মালবেড়ি গাছ আছে। এই গাছে ছোটো ছোটো ফল হয় । পাকলে বেশ খেতে। খুব উপকারী জিনিস । যদি বাগানে পাখি দেখতে চান তাহলে এই গাছ দু তিনটে বসিয়ে দিন। সারা শহরের পাখি চলে আসবে ফল খেতে!

বাবাই এর বাগানে প্রচুর পাখি আসে। পাখি দেখেও যে কি শান্তি!

আর আছে কিছু Asclepias tuberosa গাছ। একে অনেকে বাটারফ্লাই মিল্কউইড বলে। উইড মানে আগাছা। কিন্তু এর ফুল ফুটলে প্রজাপতি আর মৌমাছি আসবেই আসবে।

চিড়িয়াখানা বাবাই এর একদম পছন্দ না । বাবাই আসলে জঙ্গল ভালোভাবে। একবার নর্থ বেঙ্গল এর চিলাপাতা জঙ্গলে গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ করে দশ মিনিট থেকেছিল…সেটা আজও চোখ বুজলে অনুভব করতে পারে। ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক …কি অদ্ভুত একটা নীরবতা ।

বাবাই চাকরি না করলে একটা ট্রাভেল এজেন্সি খুলতো। শহরের লোকগুলোকে ধরে ধরে জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে গাছ চেনাতো। একটা বড়ো পুরানো গাছের গায়ে হাত দিয়ে চোখ বুজলে যে অনুভূতিটা পাওয়া যায় সেটা ওই শহরের মানুষগুলো জানে?

বেড়াতে যাওয়া মানে একদম মোবাইল ফোন বন্ধ করে নিজের গভীরে ডুব দেওয়া। এক জায়গায় শিকড় ছড়িয়ে একটা গাছ হয়ে প্রকৃতির সাথে মিশে যাওয়া । ওই সাইট সিয়িং এর নামে চরকির মতো নেচে বেড়ানো , সেলফি তোলা এসব করেই শহরের মানুষগুলো বেড়ানোর আসল মজাটাই নষ্ট করে ।

বাবাই এসব জেগে জেগে স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন ভাঙ্গে বাবাই এর বউ যখন বলে “যাও..ছেলেটার দুধটা নিয়ে এসো ” ।
একদিন দুধ না খেলে কি যে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে কে জানে। না নিয়ে এলেই অশান্তি!

বাবাই এর বউ জানে এই অশান্তিটা না করলে মানুষটা আরো বিগড়ে যাবে। সংসারী মানুষের বাউন্ডুলে মন হলে খুব মুস্কিল …

# এটা গল্প। এই গল্পের সব চরিত্র কাল্পনিক। কেউ বাস্তব জীবনে কারো সাথে মিল পেলে সেটা নিছকই কাকতালীয় ব্যাপার।

তবে লোকজন পছন্দ করলে গল্পটা চলতেই পারে 😂

© গাছপাকা।
গাছ নিয়ে এইরকম মূল্যবান টিপস সরাসরি আপনার হোয়াটস্যাপ একাউন্টে পেতে আমাদের “গাছের পাঠশালায়” ভর্তি হতে পারেন। এই পাঠশালায় রোজ গাছ নিয়ে ছোটো ছোটো টিপস শেয়ার করা হয়। খুব সহজে ,কম যত্নে আর কম খরচে গাছ করা সম্ভব ! ভালো গাছ করাটা কোনো রকেট সাইন্স না , কিন্তু সঠিক যত্নটা জানা দরকার আর চর্চায় থাকাটা দরকার।

আমাদের হোয়াটস্যাপ গ্রুপ।

আমাদের হোয়াটস্যাপ গ্রুপ “গাছপাকার গাছের পাঠশালা” ।রোজ একটু একটু করে গাছ করা শিখতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।

Join Us

আমাদের ফেসবুক পেজ।

আমাদের ফেসবুক পেজ “গাছপাকা” । গাছ নিয়ে বিস্তারিত জানতে এই পেজটি ফলো করতে পারেন।

Join Us

আমাদের ফেসবুক গ্রুপ।

আমাদের ফেসবুক গ্রুপ “গাছের সমস্যার সমাধান ” । আপনার গাছের সমস্যায় পরামর্শ চাইতে এই গ্রুপে পোস্ট করুন।

Join Us

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
× Whatsapp