গাছ দিয়ে ইন্টেরিয়র সম্ভব ?

গাছ দিয়ে ইন্টেরিয়র সম্ভব ? হ্যা, খুব ভালোভাবেই সম্ভব। তবে কিছু জিনিস মাথায় রাখতে হবে । এক এক করে একটু বলার চেষ্টা করছি..দেখি পারি কিনা!

প্রথম কথা, গাছ কিনে নিয়ে এসে কোথায় রাখবেন সেটা খুঁজে বেড়ালে বড়োজোর ঘরে কিছু গাছ আছে ওইটুকু বলতে পারবেন । গাছ দিয়ে ইন্টেরিয়র মানে কিন্তু শুধু কয়েকটা গাছ কিনে এনে যেখানে সেখানে রেখে দেওয়া না।

এই কথাটাই প্রথমে আপনাকে বুঝতে হবে!

গাছ নিয়ে ইন্টেরিয়র একটা আর্ট । শুধু গাছ ভালবাসলেই হবে না, একটা আর্টিস্টিক মন আর চোখ থাকা চাই ।

সুন্দর পট , পটের আকৃতির সাথে গাছের আকৃতি মিলছে কিনা এগুলো খুব খুব ইম্পরটেন্ট বিষয় হয়ে দাঁড়ায় যদি গাছ দিয়ে ইন্টেরিয়র করতে চান।

আজকাল দেখি অনেকেই ইঞ্জিনিয়ারিং উড দিয়ে নতুন ফ্ল্যাটের ইন্টেরিয়র ডিজাইনার করান। এটা যে কি ভুল করেন অনেকেই জানেন না । খুব ক্ষতিকারক জিনিস এই ইঞ্জিনিয়ারিং উড !

বিষয়টা একটু ডিটেলে বলি , কিছুজন সচেতন হলেও লাভ। ইঞ্জিনিয়ারিং উড কি করে বানানো হয় জানেন? কাঠের গুড়োর সাথে আঠা মিশিয়ে পেস্ট করে। এই আঠার মধ্যে থাকে ফর্মালডিহাইড, খুব বেশি পরিমাণেই থাকে… এটা হিউম্যান কার্সিনোজেন । গোদা বাংলায় বললে এটা মানুষের শরীরে ক্যান্সার এর সৃষ্টি করে !

ভালো করে ভাবুন। দিনের পর দিন আপনি যেখানে থাকছেন , রাতে ঘুমাচ্ছেন…আপনার প্রতিটা শ্বাস এর সাথে একটু একটু করে আপনার শরীরে ফর্মালডিহাইড ঢুকছে ! যেচে পরে নিজেই নিজেকে শ্লো পয়জনিং করছেন।

আপনি বলবেন কতটাই বা ফর্মালডিহাইড আছে এর মধ্যে ! প্রশ্নটা সেটা না। প্রশ্নটা হচ্ছে আপনি দিনের পর দিন একটু একটু করে বিষ নিচ্ছেন ।

যাইহোক , বলতে গেলে অনেকেই সিরিয়াসলি নেয় না। তাই খুব একটা লোকজনকে বলতে যাই না। আজ থেকে একশো বছর আগেও কিন্তু ক্যান্সার জিনিসটা এভাবে ছিলো না। আমরা নিজেরাই নিজেদের বাঁশ ঘরে বয়ে আনছি।

এগুলোতে খরচ ও নেহাত কম না । একটা হাজার স্কয়ার ফিটের ফ্ল্যাট এর ইন্টিরিয়র করাতে খুব কম করেও নয় দশ লাখ টাকা খরচ ।

অথচ এর দশ ভাগের এক ভাগ মানে এক লাখ টাকা খরচ করলে গাছ দিয়ে দুর্দান্ত ইন্টেরিয়র বানিয়ে দেওয়া যায়। উপরি হিসাবে এক্সট্রা অক্সিজেন , ফ্রিতে স্ট্রেস রিলিফ !

গাছের সাথে মানুষের রিস্তা অনেক পুরানো। আপনার আমার পূর্বপুরুষ গাছের সাথেই থাকতো। গাছের ফল খেয়ে দিন কাটাতো। সেই জিনটাই আছে আমার আপনার মধ্যে!

দেখবেন নর্থ বেঙ্গল গেলে হঠাৎ করেই মনটা কেমন ভালো হয়ে যায়। পাহাড় , জঙ্গল , গাছ এই পরিবেশটাই মানুষের মন ভালো করে দেয়।

কি বলতে শুরু করে কোথায় চলে গেলাম । যাইহোক , যেটা বলছিলাম –

গাছ দিয়ে ইন্টেরিয়র করতে হলে প্রথমে ঠিক করুন কোন কোন জায়গায় গাছ রাখবেন। তারপর ভালো করে পর্যবেক্ষণ করুন ওই জায়গাগুলোতে সূর্যের আলো কিভাবে আসে আর কতক্ষণ থাকে।
এটা খুব খুব ইম্পরটেন্ট। মাটি , সার , গাছ , জল সব ম্যানেজ করে নেওয়া যাবে। কিন্তু সূর্যের আলোকে কিভাবে ম্যানেজ করবেন? আর্টিফিশিয়াল লাইট দিয়ে কিছুটা ম্যানেজ করা যায় , কিন্তু সেটা খরচ সাপেক্ষ আর ওসব করে খুব ভালো গাছ হয় না। গাছ কোনোমতে বেঁচে থাকে , ওইটুকুই।

আসলে অনেকেই একটা কথা ভুলে যায় । গাছ করা মানে গাছটাকে তার ন্যাচারাল হ্যবিট্যাট এর সমতুল্য একটা পরিবেশ আর্টিফিশিয়ালি দেওয়া… এর থেকে একচুলও বেশি না। বেশি যত্ন করলে বেশি ভালো গাছ হয় না। সঠিক পরিবেশ দিয়ে গাছকে নিজের মতো বাড়তে দিন । দেখবেন আপনার হাতে ম্যাজিক এর মতো গাছ হচ্ছে।

জায়গা ঠিক হয়ে গেলে , আর সেই জায়গা গুলোতে কিরকম সূর্যের আলো আসে এটা জেনে যাওয়ার পর গাছ বাছুন। সব গাছের সূর্যের আলোর প্রয়োজন সমান হয় না। কোথাও সূর্যের আলো কম আসলে সেখানে এমন গাছ রাখুন যার আলোর প্রয়োজন কম।

একগাদা হাবিজাবি গাছ রেখে দেওয়ার থেকে এইভাবে বেছে বেছে , প্ল্যান করে গাছ রাখলে দেখতেও অনেক সুন্দর লাগে সাথে গাছগুলোও ভালো থাকে ।

অনেককেই দেখি একদিনে অনেক গাছ নিয়ে এসে এদিক ওদিক রেখে দিলো , তারপর এক মাসের মাথায় সব গাছ শুকাতে শুরু করলো … ব্যাস গাছ প্রেমের ওখানেই ইতি!

একেবারে অনেক গাছ কিনবেন না। দুটো তিনটে করে গাছ কিনুন। গাছগুলোকে বোঝার চেষ্টা করুন । ওই গাছগুলো সেটেল হয়ে গেলে আবার নতুন দুটো তিনটে গাছ কিনুন।
এই স্ট্র্যাটেজি নিয়ে চলুন। দেখবেন এক বছরের মধ্যে আপনার ফ্ল্যাটের মধ্যেই একটা গাছপালা নিয়ে একটা সুন্দর পরিবেশ তৈরি হয়ে গেছে।

যেকোনো নার্সারীতেই ভালো গাছ আর খারাপ গাছ মিশে থাকে। অনেকেই গাছ না দেখে শুধু ফুল বা ফল দেখে গাছ তুলে নিয়ে চলে আসেন। খুব ভুল এটা । কেনার সময় ভালো গাছ দেখে কিনুন, ফুল বা ফল থাকুক আর না থাকুক। গাছ ভালো থাকলে ফুল ফল এমনিই আসবে । কিন্তু গাছ ভালো না থাকলে যে ফুল দেখে গাছটা নিয়ে এলেন , সেই ফুলটা শুকালেই গাছটাও শুকাবে। অনেকের তাই হয় … গোড়ায় গলদ ।

গাছ নিয়ে ইন্টিরিয়র করতে চাইলে আপনাকে আস্থেটিক্স এর একটা আইডিয়া থাকা দরকার। ঘরের দেয়ালের সাথে পটের রং মিলছে কিনা , বা পটের রং কিরকম হলে একটা সিমেট্রি থাকবে …এই ছোটো ছোটো জিনিসগুলো নিয়ে আগে ভাবুন। সেই হিসাবে পট কিনবেন ।

যেকোনো আর্ট এর একটা থিম থাকা খুব খুব জরুরি। গাছ দিয়ে ইন্টেরিয়র এর ক্ষেত্রেও এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

মোদ্দা কথা , গাছ দিয়ে অনেক কম খরচে অনেক বেটার ইন্টেরিয়র করা সম্ভব । কিন্তু করতে হবে খুব ধীরে ধীরে , সময় নিয়ে । গাছের সাথে নিজেকেও গ্রো করতে হবে..

এই করতে করতে একদিন দেখবেন , মনে একটা শান্তি এসেছে। লোকজনের কোলাহল , মেটেরিয়াল জিনিস নিয়ে কার কি আছে এটা নিয়ে মনখারাপ এই জিনিসগুলোতে আর প্রবৃত্তি আসছে না।
একটা ছোট্ট ফুল ফুটলে , একটা মৃতপ্রায় গাছে একটা ছোট্ট সবুজ পাতা দেখলে মনে যে আনন্দের জোয়ার আসবে সেটা অন্য কিছুতে খুঁজে পাবেন না। গাছগুলোর পাতায় হাত দিলে নিজের সন্তানের গায়ে হাত দেওয়ার অনুভূতি পাবেন।

সেইদিন বুঝবেন বৃথাই এতগুলো বছর নষ্ট করেছেন জীবনে। যে জিনিস শান্তি দেয় না , দিতে পারে না …সেগুলোর পিছনেই কতোগুলো দিন , কতোগুলো রাত ছুটে বেড়িয়েছেন। যখন সাইকেলে চরতেন, তখন মনে হতো একটা বাইক কিনতে পারলে বোধহয় জীবনটা সুন্দর হতো, যেদিন বাইক পেলেন , সেদিন মনে হলো একটা চার চাকা হলে আরো ভালো হতো….চার চাকা হওয়ার পর ভাববেন একটা মার্সিডিজ হলে তবেই জীবনে কিছু করলাম…
এই করতে করতে শেষের দিন চলে এলো । মার্সিডিজ এ না, স্টিলের বেডে চড়ে ইলেকট্রিক চুল্লীর মধ্যে চলে গেলেন।

জীবনে টাকা পয়সার দরকার নেই , এরকম অবাস্তব কথা বলার কোনো ইচ্ছা আমার নেই। যতো পারেন টাকা রোজগার করুন … কিন্তু শিকড়টা যেনো থাকে মাটিতে। প্রকৃতির সাথে টাচ হারিয়ে ফেললে কিন্তু যতই টাকা রোজগার করুন না , শান্তি পাবেন না। টাকা , শান্তি দুটোই দরকার , একসাথে দরকার।

পরবর্তী প্রজন্ম আরো খারাপ ভাবে বড়ো হচ্ছে। মোবাইল , কম্পিউটার গেমসের মারামারি খুনো খুনী… গাছের মর্ম বোঝে না। এদের বয়স আমাদের মতো হলে কিসে শান্তি খুঁজবে এরা?

আমার ছেলেটার বয়স তিন বছর। ভালো করে হাঁটতে শেখার আগেই গাছে জল দেওয়ার পাইপ ধরেছে। অসম্ভব দুরন্ত হলেও ছাদে গেলেই গাছের পাতায় হাত বুলিয়ে দিতে শিখেছে… আসলে বোধহয় বাচ্চাদের কিছুই শেখাতে হয় না। ওরা যা দেখে সেটাই শেখে। এই রকম দুরন্ত ছেলে গাছের কাছে এলেই একদম অন্যরকম হয়ে যায়।

কতোদিন এইভাবে রাখতে পারবো জানি না। তবে কিছুতেই ওকে গাছের সঙ্গ ছাড়তে দেবো না। জীবনে সফল হোক না বা না হোক , জীবনে শান্তি পাবে গাছ নিয়ে থাকলে।

© গাছপাকা।
গাছ নিয়ে এইরকম মূল্যবান টিপস সরাসরি আপনার হোয়াটস্যাপ একাউন্টে পেতে আমাদের “গাছের পাঠশালায়” ভর্তি হতে পারেন। এই পাঠশালায় রোজ গাছ নিয়ে ছোটো ছোটো টিপস শেয়ার করা হয়। খুব সহজে ,কম যত্নে আর কম খরচে গাছ করা সম্ভব ! ভালো গাছ করাটা কোনো রকেট সাইন্স না , কিন্তু সঠিক যত্নটা জানা দরকার আর চর্চায় থাকাটা দরকার।

আমাদের হোয়াটস্যাপ গ্রুপ।

আমাদের হোয়াটস্যাপ গ্রুপ “গাছপাকার গাছের পাঠশালা” ।রোজ একটু একটু করে গাছ করা শিখতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।

Join Us

আমাদের ফেসবুক পেজ।

আমাদের ফেসবুক পেজ “গাছপাকা” । গাছ নিয়ে বিস্তারিত জানতে এই পেজটি ফলো করতে পারেন।

Join Us

আমাদের ফেসবুক গ্রুপ।

আমাদের ফেসবুক গ্রুপ “গাছের সমস্যার সমাধান ” । আপনার গাছের সমস্যায় পরামর্শ চাইতে এই গ্রুপে পোস্ট করুন।

Join Us

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
× Whatsapp