প্রথমবার ওয়াটারলিলি গাছ করবেন? একদম ঠিক জায়গায় এসেছেন! এই গাছ করতে হলে যেটুকু জিনিস আপনার না জানলেই নয় , সেগুলো বলার চেষ্টা করবো এই সিরিজে।
খুব কম যত্নের গাছ এটা। পদ্ম বা অর্কিড এর মতই … বিনা যত্নে পরের পর ফুল দিয়ে যায়। সপ্তাহে একদিন দশটা মিনিট এই গাছের জন্য বরাদ্দ রাখলেই অনেক। রোগ বালাই প্রায় নেই বললেই চলে । তবে সঠিক যত্নটা জানা চাই।
ট্রপিকাল ওয়াটারলিলির গাছ বসানোর এক মাসের মধ্যে ফুল চলে আসে।
সবমিলিয়ে আমার খুব পছন্দের গাছ। অফিসের চাপ , ফ্যমিলি রেসপনসিবিলিটি সবকিছু সামলেও এই গাছ অনায়াসে করা যায়। এমনিতেই আমি অফিস , ফ্যমিলি, লেখালিখি এসব নিয়ে খুব ব্যস্ত থাকি , তাই ঝামেলার গাছ আমি করি না , কাউকে করতেও বলি না।
যাঁরা পদ্ম গাছ করেন , একটা সময় আসে যখন তারা চান এই ওয়াটারলিলি গাছ করতে। বাড়িতে পদ্ম গাছ থাকলে অবশ্যই ওয়াটারলিলি গাছ রাখুন । দুটো গাছের যত্ন অনেকটা একই রকম। এমনকি পদ্মের গামলার মাঝে একটা করে ট্রপিক্যাল লিলি লাগিয়ে দিতে পারেন।
যাইহোক আলো কতোটা লাগবে , মাটি কিভাবে বানাবেন এগুলো বলার আগে একটা জিনিস একটু জানিয়ে রাখি। ওয়াটারলিলি মূলত দু প্রকার । হার্ডি ওয়াটার লিলি আর ট্রপিকাল ওয়াটার লিলি। কিছু ওয়াটারলিলি আছে যেগুলো ইন্টার সাবজেনেরিক , মানে হার্ডি আর ট্রপিকাল এর ক্রস …. তবে শুরু করার জন্য এই হার্ডি , আর ট্রপিকাল এটা মনে রাখলেই হবে।
ইন্টার সাবজেনেরিক ওয়াটার লিলি সংখ্যায় খুব কম , কালেক্টররা রাখেন … আম আদমির জন্য হার্ডি ,ট্রপিকাল ই ঠিক আছে। পদ্মের ক্ষেত্রেও হার্ডি , ট্রপিকাল হয় । তবে পদ্মের ক্ষেত্রে পিওর হার্ডি বা পিওর ট্রপিকাল খুব কম। বেশিরভাগই হার্ডির সাথে ট্রপিক্যাল এর ক্রস। ওয়াটার লিলির ক্ষেত্রে কিন্তু এই সেপারেশন টা খুব বেশি।
আচ্ছা , এবার কোনটা ট্রপিকাল ওয়াটার্লিলি আর কোনটা হার্ডি ওয়াটারলিলি বুঝবেন কিভাবে? এটা বোঝা কিন্তু জরুরী। কারণ হার্ডি আর ট্রপিকাল ওয়াটার লিলির যত্ন বা বসানোর পদ্ধতি একটু অন্যরকম।
১. হার্ডি লিলির পাতা গোলাকার হয় , একটু মোটা টাইপের , পাতার কিনারা মসৃণ হয়। ট্রপিকাল লিলির পাতা অপেক্ষাকৃত কম গোলাকার হয় , পাতা পাতলা হয় , পাতার কিনারা খাঁজকাটা হয়। ব্যতিক্রম আছে , তবে এটাই জেনারেল রুল।
২. ট্রপিকাল লিলির কন্দ গোল হয় , হার্ডির কন্দ লম্বা টাইপের হয়। এটারও ব্যতিক্রম আছে , তবে সাধারণভাবে এটাই হয়।
৩. ট্রপিকাল লিলির পাতা সবসময় এক জায়গা থেকেই বের হয় , বাল্ব এর মাথা থেকে। হার্ডির রাইজম যেহেতু লম্বা হয় তাই এর পাতাও গামলার বিভিন্ন জায়গা থেকে বেরোতে দেখবেন।
কি দিয়ে শুরু করা উচিত ? অবশ্যই ট্রপিকাল লিলি দিয়ে ।
কেনো? কারণ এরা ডেইলি ব্ল্যুমার। মানে রোজ ফুল দেয়। হার্ডি লিলি অপেক্ষাকৃত কম ফুল দেয়।
আজ ট্রপিক্যাল ওয়াটারলিলির পরিচর্যা নিয়ে বলবো
১. আলো – খোলা আকাশের নিচে রাখলেও ফুল দেবে , সেড এর তলায় রাখলেও ফুল দেবে। উজ্জ্বল আলো বা সরাসরি রোদ দুটোই চলবে। শুধু অন্ধকার জায়গায় না রাখলেই হলো।
তাই আপনার বাগানে যেখানে সরাসরি রোদ আসে না , কিন্তু ভালো আলো আসে, সেখানে পদ্ম গাছ না করতে পারলেও এই গাছ করতে পারবেন।
২. জল – এরা জল পছন্দ করে। পাতা জল ছেড়ে বাইরে চলে এলে রোদ লাগলে পাতা পুড়ে যায়। তাই গামলায় সবসময় জল থাকা চাই ।
নোট: আমি জল ছাড়াও ট্রপিকাল লিলি করেছি, ফুল ও পেয়েছি। তবে জিনিসটা সহজ না , বনসাই করার মতোই ধৈর্য লাগে। তাই নতুন হলে জল ছাড়া ট্রপিক্যাল লিলি করবেন না।
৩. পাত্র: এদের জলের সারফেস বেশি লাগে কিন্তু মিডিয়া খুব কম লাগে। তাই ট্রপিকাল লিলি সবসময় পট ইন পট করবেন। মানে একটা ছোটো জায়গায় গাছটা বসিয়ে অন্য একটা বড় পাত্রে জল নিয়ে তার মধ্যে গাছ সহ ছোটো জায়গাটা ডুবিয়ে রাখবেন।
নিচে কিছু গামলার মাপ দিচ্ছি –
* ইনার পট – ১২/৬ , আউটার পট ২২/১০ বা ১৮/১০
* ইনার পট – ৪/৪ ,আউটার পট ১২/৬
X/Y মানে X ইঞ্চি ডায়ামিটার, Y ইঞ্চি ডেপথ।
খুব ছোটো জায়গাতেও এরা ফুল দেয়। তাই জানালাতে বা ফ্ল্যাটের বারান্দা তেও অনায়াসে করতে পারবেন।
৪. মিডিয়া : ইনার পটের একদম নিচে হাফ ইঞ্চি কম্পোস্ট ( গোবর সার বা ভার্মি) তার ওপর পাঁচ ইঞ্চি নর্মাল গার্ডেনের মাটি। কম্পোস্ট এর লেয়ারে ওয়াটারলিলি স্পেসিফিক ফার্টিলাইজার বসানোর সময় দিয়ে দিলে সারা বছর রিপট করার কোনো প্রয়োজন হবে না ।
গাছ বসাবেন গামলার ঠিক মাঝখানে। ক্রাউন যেনো মাটিতে ঢাকা না পড়ে।
৫. সার : বসানোর সময় সবকিছু পরিমাণ মতো দিয়ে বসালে সারা বছর আর কোনো সার দিতে লাগবে না। ট্রপিক্যাল লিলি ফার্টিলাইজার সেনসিটিভ। বেশি সার হয়ে গেলে পাতা পচে যাবে, পাতা কুঁকড়ে থাকবে, কুঁড়ি হবে কিন্তু গলে নষ্ট হবে…এরকম সমস্যা করবে।
বুঝতে না পারলে সার কম দিন , কোনোভাবেই সার বেশি দেবেন না। সার কিছু না দিলেও ট্রপিক্যাল লিলি ফুল দেবে।
৬. রিপট: বছরে একবার । মার্চ এর প্রথম সপ্তাহে। অতিরিক্ত সার দিয়ে পচিয়ে না ফেললে বছরের পর বছর একই গাছ থেকে ফুল পাবেন।
৭. ডরমেন্সি: শীতকাল। এই সময় পাতা নষ্ট হয়ে যায়। বাল্ব তুলে সংরক্ষণ করতে হয়। কিভাবে করবেন শীতকাল আসুক জানিয়ে দেবো।কিছু ট্রপিক্যাল লিলি আবার শীতকালেও ফুল দিয়ে যায়।
৮. ব্লুমিং : রোজ ফুল দেয়। ফুল দেখে দেখে বিরক্ত হয়ে যাবেন কিন্তু এরা ফুল দেওয়া বন্ধ করবে না। গাছ কখনও খালি থাকবে না।
নীল পদ্ম হয় না , কিন্তু নীল ওয়াটার লিলি হয়। অজস্র ভ্যারাইটি হয় ট্রপিক্যাল লিলির, লাল , নীল ,হলুদ …।
© গাছপাকা।
গাছ নিয়ে এইরকম মূল্যবান টিপস সরাসরি আপনার হোয়াটস্যাপ একাউন্টে পেতে আমাদের “গাছের পাঠশালায়” ভর্তি হতে পারেন। এই পাঠশালায় রোজ গাছ নিয়ে ছোটো ছোটো টিপস শেয়ার করা হয়। খুব সহজে ,কম যত্নে আর কম খরচে গাছ করা সম্ভব ! ভালো গাছ করাটা কোনো রকেট সাইন্স না , কিন্তু সঠিক যত্নটা জানা দরকার আর চর্চায় থাকাটা দরকার।
আমাদের হোয়াটস্যাপ গ্রুপ।
আমাদের হোয়াটস্যাপ গ্রুপ “গাছপাকার গাছের পাঠশালা” ।রোজ একটু একটু করে গাছ করা শিখতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।
আমাদের ফেসবুক পেজ।
আমাদের ফেসবুক পেজ “গাছপাকা” । গাছ নিয়ে বিস্তারিত জানতে এই পেজটি ফলো করতে পারেন।
আমাদের ফেসবুক গ্রুপ।
আমাদের ফেসবুক গ্রুপ “গাছের সমস্যার সমাধান ” । আপনার গাছের সমস্যায় পরামর্শ চাইতে এই গ্রুপে পোস্ট করুন।