Share this post:
Post Views: 290
ভালো গাছ করার জন্য সবথেকে ইম্পর্টেন্ট জিনিস কি জানেন? সেটা হলো দেখেশুনে ভালো গাছ কেনা!!! অনেকেই শুরুটাই করেন ভুলভাল , রোগ ধরা গাছ কিনে নিয়ে আসেন । একে তো সেই রোগধরা গাছের পিছনে খাটনি ,তারপর ওটা থেকে পুরানো গাছে রোগ লেগে যাবে । তারপর থাকুন সারাদিন ওই ইনসেকটিসাইড আর পেস্টিসাইড নিয়ে !! গাছের দামের থেকে যত্ন করার খরচ বেশি হয়ে যায় এইক্ষেত্রে।
তাই গাছ কিনতে যাওয়ার আগে কি দেখে ভালো গাছ কিনবেন সেটা ভালো করে জেনে নিন।অনেক খাটনি আর টাকা বেঁচে যাবে আপনার।
বিভিন্ন নার্সারি তে ঘোরার সুবাদে আমার যেটা অভিজ্ঞতা সেটা বলি। ধরুন আপনি নার্সারীতে গেলেন ,গিয়ে দেখলেন যে ১২০ টাকায় গোলাপ গাছ বিক্রি হচ্ছে , আপনি কি দেখে গাছ চয়েস করবেন ?
আপনি যদি আনাড়ি হন ,তাহলে কি দেখে গাছ নেবেন আমি বলে দিচ্ছি !! আপনি দেখবেন সবথেকে বড় গাছ কোনটা ,আর কোনটাতে বেশি ফুল ফুটে আছে ।
অভিজ্ঞরা কি দেখবে জানেন ? প্রথমেই তারা দেখবেন যে কোনো এলা ডাল আছে কিনা , কোনো বড় এলা ডাল থাকলে গাছটা অলরেডি কমজোর হয়ে আছে, তারপর যেখানটা গ্রাফট করা আছে সেখানটা ভালো করে খেয়াল করবে যে গাফট এর জায়গাটা ভালো করে জুড়েছে কিনা ।তারপর গাছের ছাল দেখবে , কোনো স্কেল আছে কিনা । তারপর দেখবে গাছে কোনো ডাইব্যাক আছে কিনা । নেক্সট যাবে পাতায় , দেখবে কোনো পাতায় হলুদ ছোপ আছে কিনা ।
এইসব দেখে সবথেকে ছোটো কিন্তু সুস্থ সবল একটা গাছ নিয়ে যাবে ,কারণ জানে এক সপ্তাহের মধ্যে গাছটা বড় হয়ে যাবে। কুঁড়িও চলে আসবে!!
আপনি না জানলে ওই রোগধরা , ফুলধরা বড়ো গাছটা উঠিয়ে নিয়ে এসে ১৫ দিন বাদ থেকে জেরবার হয়ে যাবেন গাছটাকে নিয়ে।ডাল শুকিয়ে যাচ্ছে,গাছ ঝিমিয়ে যাচ্ছে , পাতা হলুদ হয়ে ঝড়ে যাচ্ছে , ফুল আসছে না……সমস্যা চলতেই থাকবে!!
আর নার্সারির লোকেরা “ম্যাডাম ,এই গাছটা নিয়ে যান
দেখুন কত ফুল হয়ে রয়েছে” বলে সবথেকে বাজে গাছটাই আপনাকে গছিয়ে দেবে।
কোনো নার্সারির বদনাম করা আমার লক্ষ্য না, আমার নিজেরও নার্সারি আছে। কিন্তু চোখের সামনে যেটা হতে দেখেছি সেটাই বল্লাম। উপযাচক হয়ে গাছ বেছে দেওয়ারও মুস্কিল আছে। অনেকে আবার উল্টো মিনিং করে। একজন একটা বাজে গাছ উঠাচ্ছিলো বলে বলতে গেলাম ওটা নেবেন না, এটা নিন। আমাকে বললো “হ্যাঁ, সেই তো , সবথেকে ছোট গাছটাই আমাকে দিন !!”
তারপর থেকে চোখের সামনে কেউ বাজে গাছ ওঠালেও কিছু বলি না। ওর থেকে ফেসবুক ভালো, যে শেখার সে ঠিকই শিখে নেবে।
এখানে যেগুলো বলবো মোটামুটি সবই সব গাছের জন্য প্রযোজ্য । এগুলো মেনে চললে অন্তত রোগধরা গাছ বাড়ি নিয়ে আসবেন না ,এটুকু গ্যারান্টি দিতে পারি। তারপর সব গাছেরই কিছু কিছু স্পেশাল জিনিস আছে, যেটা দেখে ভালো গাছ কিনা চেনা যায় , সেগুলো ধীরে ধীরে গাছ করতে করতে চিনতে শিখে যাবেন।
তাহলে একদম বেসিক কি কি জিনিস দেখবেন সেটা বলি –
(১) সবথেকে আগে পাতা দেখবেন । কিছু ব্যতিক্রমী গাছ ছাড়া ( যেমন ক্রোটন ,কোলিয়াস , মুন ক্যাকটাস ) ৯০% গাছের পাতা সবুজ । প্রজাতি ভেদে কিছু গাছের পাতা ঘন সবুজ ,কিছুর হালকা সবুজ । তাই কেনার সময় পাতা ভালো করে দেখুন ।
সবুজটা একটু হালকা বা গাঢ় হতেই পারে , কিন্তু যেটা দেখবেন পুরো গাছের পাতাগুলো একইরকম সবুজ কিনা !! এটা দেখা কিন্তু খুব জরুরি । গাছের রোগ আছে ,অথচ পাতায় তার কোনো ছাপ নেই, এরকম বিরল ।
# যদি দেখেন যে একদিকের পাতা অন্যদিকে এর থেকে ফেকাশে , বা একটা ডাল এর পাতা ফেকাশে ,মানে বুঝবেন “ডাল মে কুছ কালা হ্যায়!!” এই গাছ নেবেন না। কোনো না কোনো সমস্যায় আছে গাছটা।
# গাছের সবুজ পাতায় হলুদ বা বাদামি ছোপ , নেবেন না। ফাঙ্গাল ইনফেকশন এর খুব কমন লক্ষণ এটা।
# মোম এর মত কিছু সাদা সাদা কিছু লেগে আছে?
এটা মিলিবাগ । জেরবার হয়ে যাবেন । তাই সাবধান ,এরকম কিছু দেখলে সেই গাছ নেবেন না।
# নতুন ছোট ছোট পাতা নেই গাছটাতে , সব পুরানো পাতা : এই গাছ নেবেন না ।কারণ হয় গাছটা dormancy তে আছে ( কিছু কিছু গাছ বছরে কিছু সময় ঘুমায়, এটাকে dormancy বলে ।এই সময় পাতা ঝরে যায় , নতুন পাতা কম গজায় , ফুল ফল কিছু দেয় না । যেমন শীতকালে জবা ,পদ্মগাছ এইসব…) নাহলে কোনো সমস্যায় ভুগছে। এই গাছ নেবেন না।
নতুন পাতা না থাকার আর একটা অর্থ এটাও হতে পারে যে কাটিংটা হয়তো এখনো ধরেনি !!!
এগুলো মোটামুটি অনেকেই করে।এবার একটা প্র টিপ বলছি শুনুন। পাতা খালি ওপর থেকে দেখলে হবে না , কিছু পাতা উল্টে নিচের দিকটা দেখুন !!
যদি দেখেন সাদা সাদা গোল গোল স্পট , বুঝে যাবেন হয় লিফ মাইনার নাহলে হোয়াইট ফ্লাই !!! ভয়ঙ্কর দুখানা জিনিস।আপনার সাধের বাগান উজাড় করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট!!!
এরপর পোকামাকড় লেগে থাকলে খালি চোখেই দেখা যায় । খুব বেশি ছোট ছোট কালো বা বাদামি পোকা থাকলে ( অফিডস ) নেবেন না। আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি অনেকে এটাও দেখেন না!!!!!
(২) পাতা তো দেখলেন ,এবার কি দেখবেন ?
এবার গাছটার গোড়া দেখবেন। গ্রাফটিং এর গাছ হলে ( বেশিরভাগ গোলাপ গাছ এরকম হয় ,মানে একটা গাছের সাথে অন্য আর একটা গাছ জোড়া দেওয়া থাকে ) দেখবেন ওই জোরের জায়গাটা শক্তপোক্ত কিনা । জোরের নীচে থেকে কোনো ডাল বেরিয়ে বড়ো হয়ে গেছে কিনা । এরকম বড়ো ডাল থাকলে আসল গাছটা কমজোরি হয়ে থাকে । এই ডাল গুলোকে চলতি ভাষায় এলা ডাল বলে।
# দেখবেন গাছটা ঝোপলো কিনা । ছোট গাছ অথচ অনেক শাখা আছে এরকম গাছ পেলে নেবেন।
# কোনো শাখার আগা শুকিয়ে গেছে কিনা । বিশেষ করে গোলাপ গাছ কেনার সময় এটা অবশ্যই দেখবেন । এটাকে ডাইব্যাক বলে , এটা থাকলে ওই গাছ না নেওয়াই ভালো । এই গাছ বাঁচাতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে আপনাকে।
শাখার ওপর কোনো মোটা পুরু আস্তরণ থাকলে সেই গাছ না নেওয়ার চেষ্টা করবেন । অনেক সময় গাছে পোকার আক্রমণ হলে গাছ এরকম গাঢ় রস বের করে ছাল থেকে , সেগুলো জমে জমে এরকম হয়।
(৩) ফুলের গাছ অনেকে ফুল ফুটে আছে এরকম দেখে গাছ কেনেন । অনেক ফুল গাছই মরশুমি ,মানে একবার ফুল দিয়েই গাছ মরে যায়। ফুল ফোটা অবস্থায় আনলে খুব বেশিদিন ফুল পাবেন না।
মরশুমি ফুলের গাছ একদম চারা থেকে করা সবথেকে ভালো ,চারার দাম ও অনেক কম পড়ে । তবে যদি আপনি নতুন বাগানি হন,তাহলে একদম ছোট চারা কিনবেন না,বাঁচাতে পারবেন না । মিনিমাম ৪/৫ ইঞ্চি চারা কিনবেন ,এগুলো বাঁচার চান্স অনেক বেশি । একদম ছোট চারা নিয়ে এসে কিকরে যত্ন নেবেন সেটা ডিটেইলস এ অন্য আর একদিন বলবো।
যদি রেডি গাছ কিনতেই চান তাহলে যে গাছে অনেক কুঁড়ি আছে সেরকম দেখে কিনুন ,ফুল দেখে না।
# গোড়ায় ভালো করে খেয়াল করুন কোনো চারা বেড়াচ্ছে কিনা । এরকম গাছ নিয়ে এলে বাড়িতে চারা করতে পারবেন।
আমি একবার নার্সারি থেকে একটা মরা খেগো পিসলিলির গাছ নিয়ে এসেছিলাম ।অনেক গাছের ভিড়ে ওটা পড়েই ছিল, কেউ নেয়নি । আমি খেয়াল করেছিলাম যে গাছটার গোড়ায় একটা 1 cm শুট আছে।
২ মাসে সবমিলিয়ে 6 টা চারা দিয়েছে গাছটা। মা গাছটাও এখন সুস্থ সবল।
বাজে গাছ বলে ডিসকাউন্ট দিয়েছিল নার্সারি মালিক । মাত্র ৩০ টাকা নিয়েছিল!!!
এবার একটা নিনজা টেকনিক বলি , টব বা গ্রোও ব্যাগের একদম তলাটা খেয়াল করুন । ফুটো দিয়ে কি কোনো শিকড় দেখা যাচ্ছে ?? সেরকম কিছু দেখলে জানবেন গাছটা খুব ভালো রুট স্ট্রাকচার তৈরি করেছে !!! মানে গাছটা শক্তপোক্ত।
যাঁরা এই পর্য্যন্ত পড়ার ধৈর্য রেখেছেন তাদের বলি এইগুলো জানতে আমার কতবছর লেগেছে জানেন। ৩০+ বছর !!! আমি প্রথম গাছ লাগাই আমার ৫ বছর বয়সে , একটা পাথর কুচি গাছ দিয়ে আমার গাছ করার শুরু !!!
অনেকে বলবেন “ওরে বাবা!! একটা গাছ কিনতে গেলে এত কিছু মনে থাকবে??” । দেখুন এগুলো কিন্তু সবই কমন সেন্স । শুধু দরকার একটু চোখ কান খোলা রাখা ।
একজন অভিজ্ঞ বাগানির সাথে আপনার তফাৎ তা কি জানেন ,সেটা হলো observation পাওয়ার !! তার জন্য দরকার একটু মনোযোগ।
রোজ গাছে জল দেওয়ার সময় গাছের পাতা গুলো একটু উল্টেপাল্টে দেখুন না । সময় বেশি লাগবে না , অথচ কত কিছু নিজে নিজেই জানতে পারবেন।
গাছের সাথে এই মেন্টাল কানেকশন টাও কিন্তু খুব জরুরি।আপনার জন্যও ,আপনার গাছের জন্যও !!
এই কানেকশনটা তৈরি না হলে কিন্তু আমি যা জানি তার সবটুকু আপনাকে বলে দিলেও আপনার সাথে আমার একটা তফাৎ থেকে যাবে!!
আমি কিন্তু আমার গাছের দিকে তাকালেই বুঝতে পারি ওরা কি চায় । আমিও চাই আপনাদের সাথেও এই কানেকশনটা তৈরি হোক।
কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই কমেন্টে লিখুন।সাধ্যমতো উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। আমাদের একটা WhatsApp community আছে ” গাছপাকার গাছের পাঠশালা ” , ওটাতে রোজ কিছু না কিছু গাছ নিয়ে টিপস শেয়ার করি । আপনারা চাইলে ওটাতেও জয়েন করতে পারেন । রোজ কিছু না কিছু শিখলেও বছর শেষে অনেকটা শেখা হয়ে যায়। রেগুলার চর্চাটা থাকা খুব দরকার।
© গাছপাকা।
গাছ নিয়ে এইরকম মূল্যবান টিপস সরাসরি আপনার হোয়াটস্যাপ একাউন্টে পেতে আমাদের "গাছের পাঠশালায়" ভর্তি হতে পারেন। এই পাঠশালায় রোজ গাছ নিয়ে ছোটো ছোটো টিপস শেয়ার করা হয়। খুব সহজে ,কম যত্নে আর কম খরচে গাছ করা সম্ভব ! ভালো গাছ করাটা কোনো রকেট সাইন্স না , কিন্তু সঠিক যত্নটা জানা দরকার আর চর্চায় থাকাটা দরকার।

আমাদের হোয়াটস্যাপ গ্রুপ।
আমাদের হোয়াটস্যাপ গ্রুপ “গাছপাকার গাছের পাঠশালা” ।রোজ একটু একটু করে গাছ করা শিখতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।

আমাদের ফেসবুক পেজ।
আমাদের ফেসবুক পেজ “গাছপাকা” । গাছ নিয়ে বিস্তারিত জানতে এই পেজটি ফলো করতে পারেন।

আমাদের ফেসবুক গ্রুপ।
আমাদের ফেসবুক গ্রুপ “গাছের সমস্যার সমাধান ” । আপনার গাছের সমস্যায় পরামর্শ চাইতে এই গ্রুপে পোস্ট করুন।